অনলাইন ডেস্ক:
এখন অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন অনেক প্রগাঢ় ও গভীর। অর্থনৈতিক সম্পর্কের সীমা ছাড়িয়ে এটি রাজনৈতিক সম্পর্কের আবর্তের মধ্যে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের যে মহাযজ্ঞ হচ্ছে তাতে চীন নিঃসন্দেহে প্রধান অংশীদার। বাংলাদেশে এমন কোন মেগা প্রকল্প নেই যেখানে চীনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণ নেই। আর এ কারণেই বাংলাদেশ অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই নির্ভরশীলতার ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি অস্বীকার করার কোন কারণ নাই। কিন্তু আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের যে লাভ তার মাশুল কি আমাদের অন্যভাবে দিতে হচ্ছে? সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের নেতিবাচক একটি ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা চলছে নিবিড়ভাবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন এ সবকিছুর পিছনে বাংলাদেশ-চীনের মধুর সম্পর্ক একটি বড় কারণ। বাংলাদেশের কূটনীতির মূল কথা ছিলো সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। কিন্তু চীনমুখী কূটনীতির কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বহু বন্ধু হারাচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এমনকি ভারতের সঙ্গেও সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের চীনের কারণে, এমনটি মনে করছেন কেউ কেউ।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ওপর যে আন্তর্জাতিক চাপ দেয়া হচ্ছে সেই চাপের নেপথ্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বলে অনেকেই ধারণা করেন। এখন নির্মোহভাবে পর্যালোচনা করার সময় এসেছে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের ফলে বাংলাদেশের লাভ হচ্ছে না কি ক্ষতি হচ্ছে? এটি সকলেই স্বীকার করবেন যে চীনের সহযোগিতার কারণেই বাংলাদেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ মেগা-প্রকল্প গুলো বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক ভাবে এখনও এগিয়ে যাওয়া একটি দেশ তার একটি বড় কারণ হলো চীনের সহযোগিতা। কিন্তু এই সহযোগিতার মূল্য কত? এই প্রশ্নটি উঠতেই পারে। বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্কের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের যে ক্ষতিগুলো হচ্ছে তা একটু খতিয়ে দেখা যাক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানাপোড়েন: বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক এখন আগের জায়গাই নেই। এটির একটি কারণ চীন বলে মনে করেন অনেকে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে অস্বস্তি: বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারত, একথা অস্বীকার করার কোন কারণ নাই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের রক্তের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে। গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় গিয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে কিছু কিছু অস্বস্তির কথা আসছে এবং এই অস্বস্তির কারণে ভারতের সাথে যদি বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়ন হয় তাহলে বাংলাদেশের ক্ষতি হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
মিয়ানমার ইস্যু: বাংলাদেশ চীনের কারণে মিয়ানমার ইস্যুতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারছে না বলে অনেক কূটনীতিক মনে করেন। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মিয়ানমারের ওপর প্রবল চাপ দিতে পারছে না। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছে। মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে চীন অসন্তুষ্ট হয়, এরকম কোন মনোভাব কাজ করছে কিনা সেটি নিয়েও নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক: চীনের কারণে বাংলাদেশ এখন আর একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানবিরোধী অবস্থানে থাকতে পারছে না বলেও কেউ কেউ মনে করেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে একটা বাহ্যিক হলেও সম্পর্ক রাখতে হচ্ছে।
আর এই সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশের কূটনীতির মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। বাংলাদেশর বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে এখন চীন, রাশিয়ার মতো দেশগুলো সামনে চলে আসছে। আর এ কারণেই প্রশ্ন উঠেছে চীনের সাথে সম্পর্কের মাশুল বাংলাদেশকে কতদূর দিতে হবে।
Leave a Reply