বরগুনা উপজেলা প্রতিনিধি : মোঃ সুজন শিকদার
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে শহরের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক ঘুরে শেষ পর্যন্ত রাস্তার মধ্যে সন্তান প্রসব করেছেন বরগুনার এক নারী। সংকটাপন্ন অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য মা ও শিশু দুজনকেই বরিশাল পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বরগুনা পৌর শহরের পশু হাসপাতাল সংলগ্ন সড়কে এ ঘটনা ঘটে। প্রসূতি ওই নারীর নাম লিমা আক্তার (১৯)। তিনি বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুরি এলাকার দরিদ্র রিক্সা চালক মো. ইব্রাহিমের স্ত্রী।
লিমার স্বামী ও স্বজনরা জানান, মঙ্গলবার সকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় প্রসূতি লিমা। ওইদিন রাতে প্রচন্ড প্রসববেদনা হলে হাসপাতালে কাতরাচ্ছিলেন লিমা। এসময় তাকে সেবা না দিয়ে উল্টো আল রাজি নামে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানোর কথা বলেন জেনারেল হাসপাতালের নার্স সহ কর্তব্যরতরা।
তাৎক্ষণিক স্বজনরা লিমাকে বেসরকারি ওই ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানেও চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে স্থানীয় পশু হাসপাতাল সড়কে অবস্থিত শেফা ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলেন আল রাজি কর্তৃপক্ষ। শেফা ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানেও চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানান কর্তৃপক্ষ।
এমন পরিস্থিতিতে পশু হাসপাতালের ওই সড়কেই সন্তান প্রসব করেন অভাগা মা লিমা আক্তার। খবর পেয়ে জেলা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেন এবং সংকটাপন্ন অবস্থায় তাৎক্ষণিক মা ও শিশু দুজনকেই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ নেতা আবু হানিফ দোলন বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে আল রাজি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। এমন সময় ক্লিনিকের ভেতরে দুই নারীর আহাজারি দেখে তাদের কাছে গেলে পুরো বিষয়টি জানতে পারি। আমি ওই প্রসূতিকে শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই। নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই বাচ্চা প্রসব করেন।
লিমা বেগমের মা বলেন, সরকারি হাসপাতাল সেবা না দিয়ে উল্টো বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠিয়েছে আমাদের। টাকা নেই তাবুও চিকিৎসার জন্য প্রত্যেকটা বেসরকারি ক্লিনিকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি আমরা। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে নাকি ডাক্তারই নেই। কেউ পারলোনা আমার মেয়ের চিকিৎসা দিতে, শেষ পর্যন্ত রাস্তায় আমার নাতির জন্ম হলো।
শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ , বরগুনা জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সানাউল্লাহ সানির সহধর্মিণী ডা. জান্নাতুল আলম লিমা বলেন, আমি ডিউটি শেষে বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর খবর পাই পশু হাসপাতাল সড়কে এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন। তাকে উদ্ধার করে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তখন আমি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে ওই নারীকে দেখি। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অবস্থা গুরুতর। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। তবে নবজাতক সুস্থ আছে কিন্তু সেও আশংকামুক্ত নয়।
হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে লিমা বেগমকে কেন ক্লিনিকে পাঠানো হল এ বিষয়ে জানতে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply